অবসরের অবসাদ, একাকীত্বের বেদনা, কোনো কিছু জানার আগ্রহ কিংবা বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বর্তমান দুনিয়াতেও সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি ব্যবহার করা হয় তা হলো ইউটিউব। একা বসে নির্জনে গান শুনতে মন চাইলে মানুষের মাথায় প্রথম যে জিনিসের কথা মাথায় আসে তা হলো ইউটিউব চ্যানেল । কোনো কিছু জানার প্রয়োজন হলেই গুগলের পরে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয় ইউটিউবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো কিছু জানার দরকার হলেও মানুষ এখন ইউটিউবের শরণাপন্ন হয়। এখন লেখাপড়ার বিষয়েও ইউটিউব অনেক বেশি কাজের পরিচয় দিচ্ছে। এক কথায় শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছে । নানান রকম তথ্য দিয়ে মানুষের জ্ঞান আহরণের বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে এবং আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে।
ভ্রমণ পিপাসূ মানুষেরা এখন কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে ট্রাভেল ব্লগ দেখে তথ্য জেনে নেয় যা ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য করে দেয়। আর যারা কোনো কারণে ভ্রমণে যেতে পারে না তারা ইউটিউবের কল্যানে ভার্চুয়ালি ভ্রমণ করে ফেলেন। মোট কথা ইউটিউব এখন মানুষের নিত্য দিনের চলার সাথী। এই ইউটিউব আসলে গুগলেরই একটা সার্চইঞ্জিন।
মানুষ একটা সময় টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলের সাথে পরিচিত ছিলো। কিন্তু সময় বদলেছে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, সহজ হয়েছে অনেক কিছুই। তারই বদৌলতে এখন মানুষ ইউটিউব চ্যানেলের সাথে পরিচিত। তাই আপনিও যদি ইউটিউবে চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থকেন তবে তা যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আজকের আলোচনার পর খুব সহজেই আপনি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন। তবে এই ইউটিউব ওভার নাইট এই জায়গায় পৌছায়নি । আসুন আগে জেনে নেই ইউটিউবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
ইউটিউবের ইতিহাসঃ
পেছনে ফিরলে স্পষ্ট দেখা যায় ২০০৫ সালে চেড হার্লি, স্টিভ চেন ও জাওয়েদ করিম এই ৩জন মিলে ইউটিউব তৈরী করেন। এর মাঝে জাওয়েদ করিম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। উনারা ৩ জনই পেপালের প্রাক্তন কর্মকর্তা। একটি আমেরিকান অনলাইন-ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হলো এই ইউটিউব। ডেটিং সার্ভিস হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে রূপ দিয়ে ঢেলে সাজানো হয় ইউটিউবকে। রাতারাতী ইউটিউবের ভিডিও শেয়ারিং এবং জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তারই ফলশ্রুতিতে ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইউটিউবকে কিনে নেয় বিশ্বের প্রথম সাড়ির অনলাইন সেবা প্রদানকারী সংস্থা গুগল।
ইউটিউব চ্যানেল আসলে কিঃ
আমরা প্রত্যেকেই ফেসবুকের সাথে পরিচিত। ফেসবুকে যেমন ছবি বা ভিডিও বা কোনো লিখা শেয়ার করতে যেমন আপনার একটি একাউন্ট বা প্রোফাইল থাকা লাগে তেমনি ইউটিউবেও একটি একাউন্ট বা প্রোফাইল থাকা লাগবে। যাকে মূলত ইউটিউব চ্যানেল বলা হয়। আজকের আলোচনায় চ্যানেলের প্রকারভেদ নিয়েও আমরা বিস্তারিত জানবো।
ইউটিউব একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজনঃ
ইউটিউব একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন তা আজ আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে খুব সহজেই জানবো। শুধু মাত্র ৩টি জিনিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলেই আপনি খুব সহজেই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন।
- ইন্টারনেট সংযোগ।
- জিমেইল একাউন্ট বা গুগল একাউন্ট।
- মোবাইল নাম্বার।
একাউন্ট খোলার পর চ্যানেল ভেরিফাই করার মাধ্যমে আরো বেশি ফিচার পাওয়ার জন্যই মোবাইল নাম্বারের দরকার পড়ে থাকে। এছাড়াও চ্যানেল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটা রিকাভার করতেও মোবাইল নাম্বারের দরকার হয়।
ইউটিউব চ্যানেলের প্রকারভেদঃ
কাজের উপর ভিত্তি করে ইউটিউব চ্যানেলকে অনেকভাবেই ভাগ করা যায় কিন্তু মালিকানা এবং কাজ উভয়ের উপর ভিত্তি করে ইউটিউব চ্যানেলকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- প্রোফেশনাল চ্যানেল।
- ব্যক্তিগত চ্যানেল।
প্রোফেশনাল চ্যানেল পেশাগত কাজে ব্যবহার হয় বলে ব্যক্তিগত চ্যানেল অপেক্ষা সাজানো গোছানো থাকে। যে চ্যানেল গুলো পাঠদান করে থাকে বা টিউটোরিয়াল দিয়ে থাকে সেগুলোকেই প্রফেশনাল চ্যানেল বলা চলে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত চ্যানেল হলো কেবল মাত্র একটি ব্যক্তি নির্ভর। আপনি কি করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কোনো বিষয়ে আলোচনা করছেন সেগুলো ভিডিও মাধ্যমে কোনো চ্যানেলে প্রকাশ করলে সেটা ব্যক্তিগত চ্যানেল হিসেবে গণ্য হবে। তবে দিনশেষে সব চ্যানেলের কাজ একই আর তা হলো ভিডিও শেয়ারিং।
আপনি দুইটি উপায়ে ইউটিউবে চ্যানেল খুলতে পারেন।
- মোবাইল দিয়ে।
- কম্পিউটার দিয়ে।
মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়মঃ
ধরে নিলাম আপনার ফোনে ইউটিউব অ্যাপ ও জিমেইল একাউন্ট আছে। আর ওই জিমেইল একাউন্টে যদি ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা না থাকে, সেক্ষেত্রে মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলা খুবই সহজ। মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবেঃ
- সর্বপ্রথম প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোট থেকে ইউটিউব অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- এরপর ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন।
- টপ মেন্যু এর উপরের ডান পাশ থেকে আপনার প্রোফাইল পিকচারে ক্লিক করুন
- তারপর My Channel নির্বাচন করুন।
- আপনার চ্যানেলের একটি সুন্দর নাম দিয়ে Create Channel চাপুন।
- অতঃপর, তৈরি হয়ে গেলো আপনার বহুল প্রতিক্ষিত ইউটীউব চ্যানেল।
এক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে যদি ইতিমধ্যে একটি বা একাধিক ইউটিউব চ্যানেল খোলাখয়ে থাকে আর আপনি ওই মোবাইল থেকেই নতুন আরো একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান, সেটাও করতে পারবেন। মোবাইলে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- আপনার ফোনের Chrome ব্রাউজার ওপেন করুন।
- এরপর youtube.com/account এই কিংকে প্রবেশ করুন।
- উপরের থ্রি-ডট মেন্যু থেকে Desktop Mode সচল করে নিন।
- যদি সাইন-ইন করা না থাকে তাহলে জিমেইল একাউন্ট সাইন-ইন করুন।
- Add or manage your channel(s) লিংক নির্বাচন করুন।
- Create a channel লিংক নির্বাচন করুন।
- যে নামে চ্যানেল খুলতে চান, সেই নাম লিখে Create বাটন চাপুন।
- উপরোক্ত পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে অবলম্বন করুন তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল।
কম্পিউটার দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার উপায়ঃ
ইতিমধ্যে যদি আপনার জিমেইল একাউন্টে ইউটিউব চ্যানেল খোলা না থাকে, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবেঃ
- যেকোনো একটি ব্রাউজার থেকে YouTube.com লিংকে প্রবেশ করুন।
- যদি জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করা না থাকে তাহলে সাইন-ইন করে ফেলুন।
- উপরের ডান পাশে থাকা প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন।
- এরপর My Channel এ ক্লিক করুন।
- তারপর আপনার চ্যানেলের নাম লিখে Create এ ক্লিক করুন
উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।
ধরে নিলাম আপনার ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেই সাথে নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান, সেক্ষেত্রে কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে যা যা করতে হবে তা হলোঃ
- কম্পিউটারের যেকোনো ব্রাউজার থেকে youtube.com/account এ প্রবেশ করুন।
- যদি সাইন-ইন করা না থাকে তাহলে জিমেইল একাউন্ট সাইন-ইন করে ফেলুন।
- Add or manage your channel(s) বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপর Create a channel এ ক্লিক করুন করুন।
- একটি নাম নির্বাচন করে, সেই নাম লিখে Create এ ক্লিক করুন।
উপরোক্ত পদ্ধতি আপনি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কম্পিউটারে আপনার নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে।
যে উপায়ে ইউটিউব চ্যানেল ভ্যারিফাই করবেনঃ
- চ্যানেল খোলার পর ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই না করা পর্যন্ত কিছু ফিচার ব্যবহার করা যায় না। যেমনঃ
- ১৫মিনিটের চেয়ে বড় ভিডিও আপলোড করা।
- কাস্টম থাম্বনেইল ব্যবহার করা।
- লাইভস্ট্রিমিং করার সুবিধা।
- কনটেন্ট আইডি ক্লেইম আপিল করার সুবিধা।
যদি আপনি ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করতে চান তবে একটি সচল মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন হবে। ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ
- যেকোনো ব্রাউজার থেকে studio.youtube.com এ প্রবেশ করুন।
- যদি ইউটিউব চ্যানেলে লগ-ইন করা না থাকে তাহলে জিমেইল আইডি দিয়ে লগ-ইন করে ফেলুন।
- এরপর বামদিকে থাকা মেন্যু থেকে Settings এ ক্লিক করুন।
- তারপর Channel ট্যাব নির্বাচন করুন।
- Verify Your Phone Number এ ক্লিক করুন।
- এরপর Text me the verification code নির্বাচন করুন।
- Select your country থেকে নিজের দেশ নির্বাচন করুন।
- এরপর নিচের ফোন নাম্বার বক্সে ফোন নাম্বার বসিয়ে দিয়ে Get Code এ ক্লিক করুন।
- কিছু সময় অপেক্ষা করার পর আপনার ফোনে ৬ডিজিটের একটি কোড আসবে, সেটি প্রদান করে Submit প্রেস করুন।
উপরোক্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই হয়ে যাবে ও আপনি ভেরিফাইড চ্যানেল এর সবগুলো ফিচার অনায়াসে উপভোগ করতে পারবেন।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করবেন যে উপায়েঃ
ইউটিউব চ্যানেলতো খোলা হলো। এবার পালা ইউটিউব ভিডিও আপলোড করার৷ মোবাইল থেকে ইউটিউব ভিডিও আপলোড করতে হলে আপনাকে যা যা করতে হবেঃ
- প্রথমে ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন।
- নিচের মাঝের মেন্যু থেকে প্লাস আইকন চাপুন।
- Upload A Videoনির্বাচন করুন।
- যেই ভিডিওটি আপনি আপলোড করতে চান, সেটি নির্বাচন করুন
- এরপর ভিডিও এর মান উপযোগী টাইটেল, ডেসক্রিপশন ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন।
- এরপর Upload চাপুন।
- এর কিছু সময়ের মাঝেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড হয়ে যাবে।
একই ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। কম্পিউটার থেকে ইউটিউব ভিডিও আপলোড করতে হলে যা যা করতে হবেঃ
- প্রথমে youtube.com এ প্রবেশ করুন।
- যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে লগ-ইন করা না থাকেতাহলে জিমেইল আইডি দিয়ে সাইন-ইন করুন।
- এরপর উপরে থাকা ভিডিও আইকনে ক্লিক করুন।
- Upload Video তে ক্লিক করুন।
- এরপর select files to upload অপশন ব্যবহার করে ভিডিও সিলেক্ট করে,আপনার ভিডিওঅনুযায়ী তথ্য, যেমনঃ টাইটেল, ক্যাটাগরি, ট্যাগ, ইত্যাদি লিখে Next চাপুন।
- ভিডিও তে কোনো এন্ড কার্ড বা ওভারলে দিতে চাইলে তা নির্বাচন করে Next চাপুন।
- এরপর ভিডিওর প্রাইভেসি সেটিংস নির্বাচন করুন এবং ঙ্গেরপর Next চাপুন।
- যদি আপনার আপলোডকৃত ভিডিও এর কপিরাইট সংক্রান্ত কোনো ইস্যু থাকে তাহলে তা দেখানো হবে।
উপরোক্ত সকল কাজ ঠিকঠাকভাবে শেষ হলে আপনার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হবে ও আপনাকে একটি ভিডিও শেয়ার এর লিংক দেওয়া হবে।
কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা হাতছানি দিয়ে ডাকবে। ফেইস ভ্যালু বাড়বে পাশাপাশি আয়ের পথও সুগম হবে। সেইসব গল্পকথা নিয়ে আলোচনা হবে অন্য কোনদিন। আজ আপাতত উপরের পদ্ধতিসমূহ অবলম্বন করে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে ফেলুন।